1. news@dailyhabiganjeralo.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
গাজীপুরে শ্রমিকের ৩ মাসের বেতন নিয়ে মালিক লাপাত্তা, প্রশাসনের গাফিলতি মাটিরাঙ্গার গোমতিতে বিএনপি নেতার পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের অভিযোগ মাধবপুরে সায়হাম গ্রুপের সৌজন্যে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা পেলেন তিন হাজার মানুষ পাহাড়পুরে অনুষ্টিত হল দেড়’শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সোমেশ্বরী মেলা দুই বাংলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তুলতুল চুনারুঘাটে তরুণ-তরুণীর গলায় ফাঁস মরদেহ উদ্ধার গর্জিয়াস গ্রুপের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত দৈনিক যায়যায়দিনে চুনারুঘাট প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক রাজু দৈনিক নয়া দিগন্ত’র মাল্টিমিডিয়া ঝিনাইদহ রিপোর্টার হলেন রোকনুজ্জামান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মোশাহিদ সরকার গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক বিস্ময় হল বানিয়াচং

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১২৮ বার

বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক বিস্ময় হল বানিয়াচং। এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে সুপরিচিত এবং এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক পরিধি – এই দুই ক্ষেত্রেই বানিয়াচং অনন্য।

বানিয়াচং গ্রামটি চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত, যা হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় মোট ১৫টি ইউনিয়ন থাকলেও, বানিয়াচং এর ৪টি ইউনিয়ন একসঙ্গে গঠিত বিশাল এই গ্রামটিকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
স্থানীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বানিয়াচং গ্রামের মোট আয়তন প্রায় ৩২.৪৩ বর্গমাইল, যা এটিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত করেছে। এই গ্রামটি একসময় এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ার পর এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামে পরিণত হয়। এই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার, এবং এর ভেতরে রয়েছে প্রায় ১২০টি পাড়া বা মহল্লা।

বানিয়াচং এর নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মতামত রয়েছে। মোগল আমলে এ এলাকায় গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী দুর্গকে ঘিরে গ্রামের নামকরণ হয় বলে ধারণা করা হয়। এ দুর্গের চারপাশে থাকা খালটি এখনো “গড়ের খাল” নামে পরিচিত। দিল্লীর সম্রাট এই অঞ্চলকে “বানেয়াজং” নামে অভিহিত করতেন, যা থেকে পরবর্তীতে বানিয়াচং নামটির উৎপত্তি। মোগল আমলে নবাব ইসলাম খাঁর শাসনামলে এখানে জমিদার ছিলেন আনোয়ার খাঁ। তাঁর আমলের কিছু পুরনো নিদর্শন, যেমন কামান, এখনো সিলেট পুলিশ লাইনে সংরক্ষিত আছে।

ভিন্নমতে ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এটি ছিল একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ‘বানিয়া’ শব্দটি এসেছে ‘ব্যবসায়ী’ শব্দ থেকে, আর ‘চং’ মানে স্থান বা জনপদ। ফলে ‘বানিয়াচং’ নামটির অর্থ দাঁড়ায় ব্যবসায়ীদের বসতি। ঐতিহাসিকভাবে এখানে ব্যবসায়ীদের বড় এক সম্প্রদায় বাস করত, যারা আশপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করত।

আরেকটি মতামত অনুসারে, প্রাচীনকালে এখানে একটি বিশাল বিল ছিল, যার নাম পুটিয়াবিল। বিলটি ছিল নানা জাতের পাখির আবাসস্থল। একজন শিকারী, যাকে ‘বানিয়া’ বলা হতো, এই বিলে একটি চাঙ নির্মাণ করে পাখি শিকার করতেন। সেই ‘বানিয়া’ এবং ‘চাঙ’ শব্দ দুটি মিলিয়েই পরবর্তীতে এলাকাটির নাম হয় বানিয়াচং।

বানিয়াচং গ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে ব্রিটিশ আমলে। প্রাথমিকভাবে বানিয়াচং সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে, শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বানিয়াচং এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিয়ে ১৯৩৪ সালের ২৩ আগস্ট ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞপ্তি ২৮৬৭ জি.জে. অনুযায়ী বানিয়াচং থানা গঠন করা হয়। তখন বানিয়াচং থানার সদর দপ্তর স্থাপিত হয়েছিল নন্দীপাড়া এলাকায়।
ব্রিটিশ শাসনামলে এই থানা প্রাঙ্গণ ছিল সমস্ত সরকারি এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস, যেমন পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্ট, উদযাপিত হতো। সেই সময়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থানার আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হতো।
পাকিস্তান শাসনামলে, বিশেষ করে জেনারেল আইয়ুব খানের শাসন পূর্ববর্তী সময়ে, বানিয়াচং থানাকে ভিলেজ এইড প্রোগ্রামের অধীনে আনা হয়। এই প্রোগ্রামের সদর দপ্তর ছিল বড়বাজারের কাছে ৩ নং কাঁচারী বাড়ীতে। যদিও প্রোগ্রামটির কার্যকাল খুব দীর্ঘস্থায়ী ছিল না, তবে এর কার্যক্রম চালাকালীন সময়ে এই কাঁচারী বাড়ী নানা অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, ভিলেজ এইড প্রোগ্রাম পরিত্যক্ত হলে, বানিয়াচং থানায় সার্কেল অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হয় এবং এই দপ্তরটি বানিয়াচং এর বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে বানিয়াচং গ্রামের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হবিগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তিবর্গ, যেমন এডভোকেট মোস্তফা আলী এমএনএ, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, লেঃ কর্ণেল এম.এ. রব এমএনএ প্রমুখ, এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে বিভিন্ন নেতার সমন্বয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের জন্য জনমত গঠনে সহায়ক ছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্যায়ে বানিয়াচং থানা হিসেবে থাকলেও, ১৯৮২ সালে এই থানাকে মান-উন্নীত করে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৫ জানুয়ারি, ১৯৮২ সালে রিয়ার এডমিরাল এম. এ. খান, তৎকালীন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, হেলিকপ্টারে বানিয়াচং এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বানিয়াচং থানার মান-উন্নয়নের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার প্রথম টি.এন.ও. ছিলেন বাবু বিকাশ চৌধুরী।

বানিয়াচং গ্রামে অনেক দিঘি এবং প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে, যা এই গ্রামকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখানে রয়েছে প্রায় ৬৬ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘি, যার নাম কমলাবতীর দিঘি বা সাগর দিঘি। এছাড়াও, এখানে আরও অনেক ছোট-বড় দিঘি আছে, যেমন যাত্রাদিঘি, ঠাকুরাইন দিঘি, দেওয়ান দিঘি এবং মালকা দিঘি। এ গ্রামেই রয়েছে রাজা পদ্মনাভের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, যা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মোগল ও সুলতানি আমলের অনেক প্রাচীন মসজিদ ও মন্দিরও এখানে অবস্থিত। বানিয়াচং গ্রামের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রিটিশ ভারতের প্রথম সাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাস এর বাড়ি এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দুই সহোদর হেম সেন ও সুশীল সেন এর বাস্তুভিটা। বানিয়াচং গ্রামের অদূরে রয়েছে লক্ষ্মীবাওর জলাবন, যা হাওরের বন্যপ্রাণীর অন্যতম আবাসস্থল। এছাড়া, মুড়ার আব্দা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন পদ্মবিল রয়েছে, যা একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি করে। বিথঙ্গল গ্রামে আছে ৬০০ বছরের প্রাচীন বৈষ্ণব আখড়া। এই আখড়াটি তার ১২০ কক্ষবিশিষ্ট দালান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বৈষ্ণব আখড়া হিসেবে পরিচিত।

এছাড়াও, হাওর অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর অনেক পর্যটক এখানে আসেন। বর্ষার সময় হাওর অঞ্চলের সৌন্দর্য এবং গ্রামীণ জীবনধারা দেখার জন্য এটি একটি চমৎকার গন্তব্য। নৌকা ভ্রমণ এবং স্থানীয় খাবার পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।

বানিয়াচং একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অধিকারী গ্রাম। এখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করে। ইসলাম ধর্ম প্রধান হলেও অন্যান্য ধর্মের মানুষও এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, যেমন ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ এখানে অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়।

যেহেতু বানিয়াচং একটি গ্রামীণ এলাকা, তাই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা হলো কৃষি। ধান, পাট, সবজি এবং মাছ চাষ এখানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। হাওরের পাশে অবস্থিত হওয়ার কারণে মাছ ধরা এবং মাছ চাষ এখানকার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান অংশ।

বানিয়াচং শুধু আকারে বড় একটি গ্রাম নয়, এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক। এর বিশালতা এবং সৌন্দর্য প্রতিদিনই পর্যটকদের এবং গবেষকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে বানিয়াচং এর গুরুত্ব কেবল ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আধুনিক সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

January ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Dec   Feb »
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© 2025, All rights reserved habiganjeralo
Theme Customized By BreakingNews